অনুপাত কি?

মার ছোট ভাই। নাম সিপ্ত। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। দুপুরে আম্মু পাশের রুম থেকে ডাক দিয়ে বললো, "শরিফুল, সিপ্তরে এই সংজ্ঞাটা বুঝায়া দে তো।" আমি সিপ্তকে বললাম, "বই নিয়া আমার রুমে আয়।" সিপ্ত আসলো। যেই সংজ্ঞাটি বুঝতে চাইলো, তার নাম "মিশ্র অনুপাত" তাও আবার "অনুপাত ও শতকরা" অধ্যায়ের সর্বশেষ সংজ্ঞা! বোঝা গেলো যে, আগের সবকটি সংজ্ঞাই পারে! কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, "কয়টা সংজ্ঞা সে বোঝে?"
যাই হোক, মিশ্র অনুপাতের সংজ্ঞাটি ছিল এমন, "একাধিক সরল অনুপাতের পূর্ব রাশিগুলোর গুনফলকে পূর্ব রাশি এবং উত্তর রাশিগুলোর গুণফলকে উত্তর রাশি ধরে প্রাপ্ত অনুপাতকে মিশ্র অনুপাত বলে।"
কে কি বুঝলেন? :P ? যাই হোক, এমন সংজ্ঞা দ্বারা অনুপাতকে কিংবা মিশ্র অনুপাতকে কখনোই ভালোমতো বোঝা যায় না!
আমি সিপ্তকে প্রথমেই জিজ্ঞাস করলাম, "অনুপাত কি?" সে বললো, "অনুপাত মানে ভগ্নাংশ". খুব ভালো কথা! কিন্তু, এই অনুপাত দ্বারা আসলে কি বোঝায়? সিপ্ত চুপ! এরপর আমি তাকে আস্তে আস্তে বোঝাতে শুরু করলাম! 

সংজ্ঞা দিয়েই শুরু করি!
অনুপাতঃ দুইটি সমজাতীয় রাশির একটি অপরটির তুলনায় কতগুণ বা কত অংশ তা একটি ভগ্নাংশ দ্বারা প্রকাশ করা যায়। এই ভগ্নাংশকে রাশি দুইটির অনুপাত বলে। রাশি দুইটি সমজাতীয় বলে অনুপাতের কোন একক নেই। (গণিত, অনুপাত ও শতকরা, ৬ষ্ঠ শ্রেনি)

শুধুমাত্র অনুপাতের বিষদ আলোচনা
দুই বন্ধু। হাবু এবং ডাবু! সিপ্তর মতোই ৬ষ্ঠ শ্রেনিতে পড়ে! তো, একদিন হাবু ডাবুকে বললো, "এই ডাবু, তুই প্রতিদিন স্কুলে কত টাকা নিস রে?". ডাবু বললো, "৫ টাকা". হাবু খুশি হয়ে বললো, "আমি নেই ১০ টাকা। তোর ডাবল!"
এখানে, হাবু যখন ডাবুকে বললো, "আমি নেই ১০ টাকা। তোর ডাবল!". 'ডাবল' শব্দটি দ্বারা এখানে মূলত তারা তাদের টাকার অনুপাতকেই তারা বুঝিয়েছে। যদিও তারা এখনো অনুপাত সম্বন্ধে কিছুই জানে না! যাই হোক, এভাবেই মূলত জীবনের অনেক ক্ষেত্রে আমরা অনুপাত ব্যবহার করে থাকি।
এবার আমরা হাবু এবং ডাবুর টাকার পরিমাণ ছকে তুলবো...

ডাবুর টাকা
হাবুর টাকা
১০

ছক দেখে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, "হাবুর টাকা ডাবুর চাইতে বেশি এবং তা ডাবুর চাইতে ৫ টাকা বেশি। অর্থাৎ, হাবুর টাকা ডাবুর টাকার দিগুণ।"
এইযে আমরা "দিগুণ শব্দটা ব্যবহার করলাম, এটা কিন্তু অনুমান নয়। এটা অংকের একটা ভাষা।". অংক করে আমরা দেখবো, "হাবুর টাকা কীভাবে ডাবুর টাকার দিগুণ?"

  • হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকার তুলনাঃ
                                                                                                                         ডাবুর টাকা
ভগ্নাংশের দ্বারা হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকার তুলনা করলে ভগ্নাংশটি হবেঃ ──────
                                                                                                                         হাবুর টাকা
যেহেতু, হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকার তুলনা করা হচ্ছে, তাই "ভগ্নাংশের লব" হিসেবে থাকবে "ডাবুর টাকা", কারন, আমরা ডাবুর টাকা হাবুর চাইতে কতগুন বেশি বা কম- তা বের করবো। আর, "ভগ্নাংশের হর" হিসেবে থাকবে "হাবুর টাকা", কারন, আমরা হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকার তুলনা করবো।
            ডাবুর টাকা        ৫         ১
অর্থাৎ, ────── = ─── = ──
            হাবুর টাকা        ১০       ২
                                                     
সুতরাং, ডাবুর টাকা হাবুর টাকার ─ গুণ।
                                                     

  • ডাবুর টাকার সাথে হাবুর টাকার তুলনাঃ

একইভাবে,
                                                                                                                         হাবুর টাকা             ১০
ভগ্নাংশের দ্বারা হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকার তুলনা করলে ভগ্নাংশটি হবেঃ ──────── = ─── = 
                                                                                                                         ডাবুর টাকা             ৫
সুতরাং, হাবুর টাকা ডাবুর টাকার ২ গুণ।

এইযে, আমরা হাবুর টাকার সাথে ডাবুর টাকা এবং ডাবুর টাকার সাথে হাবুর টাকার যেই তুলনা করলাম এটাই মূলত "অনুপাত". অর্থাৎ, আমরা বলতে পারি যে, "অনুপাত মানে একটি পরিমানের সাথে অপর একটি পরিমানের তুলনা করা।". হাবু এবং ডাবুর যেই ছকটি দেখেছিলাম, সেই ছকটির মধ্যেই যদি আমরা তুলনা করি এবং এই "তুলনা" শব্দটিকে যদি আমরা ":" এই প্রতিক দ্বারা চিহ্নিত করি, তাহলে আমরা পাই...

ডাবুর টাকা
তুলনা
হাবুর টাকা
:
১০

এখানে, ":" এই চিহ্নটিই হচ্ছে সেই "অনুপাতের চিহ্ন", যাকে আমরা "ইসটু" বলি। :P
সুতরাং, ডাবুর টাকা : হাবুর টাকা = ৫ : ১০ = ১ : ২ (ভগ্নাংশের মত উপর-নিচে কাটাকাটি করে!)

আশা করি, ছোটদের আর বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না। :) ।

বিঃদ্রঃ আজকের এই লেখাটি মূলত যারা "অনুপাত কি?"- জানে না, তাদের জন্য। তাই, পাকনারা ঘ্যাঙ ঘ্যাঙ না করলেই ভালো! :P ! আজকের এই লেখা পড়ে যদি অন্তত একজনও অনুপাত সম্পর্কে একটুও বুঝতে পারে, তাহলে আমার লেখা সার্থক। অনুপাতের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে একদিন লিখবো ইনশাআল্লাহ্‌। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন এবং গণিতকে ভালবাসুন!

ই লেখাটির পিডিএফ ফাইল দেখুন বা ডাউনলোড করুন (৭৯৩ কেবি)

2 টি মন্তব্য:

 

মজার গণিত যাদের জন্যে উৎসর্গ

মজার গণিত ব্লগটা আমি সকল গণিতপ্রেমি শিক্ষার্থীদের জন্যে উৎসর্গ করলাম। বিশেষ করে, আমার প্রানপ্রিয় "এ.কে. হাই স্কুল" এর সকল বন্ধুদের এবং শিক্ষকদের জন্যে এই ব্লগটি উৎসর্গ করলাম! কারন, অংক আমি যতটুকুই পারি না কেন, এ.কে. হাই স্কুল থেকেই অংকের প্রতি আমার ভালোবাসা জন্মে। তাই এখনো আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, "স্কুল জীবনটাই সবচেয়ে মজার (অংকের মত!)" ...

এ.কে. - আমি চিরকৃতজ্ঞ তোমার কাছে!

মজার গণিত ফ্যান পেজ




মজার গণিতের সঙ্গেই থাকুন।

আমি কে?

-। থাকি নারায়ণগঞ্জ। বর্তমানে অধ্যয়নরত আছি কুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা বিভাগে। নিজের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না! মাঝে মাঝে গুগলে "mubin986" লিখে সার্চ দিয়ে নিজেকে চেনার চেষ্টা করি! পড়ালেখা বাদে সকল কাজ করতেই আমার ভালো লাগে! গণিতকে কিসের জন্যে যে ভালো লাগে?- তা আমি নিজেও জানি না! কারণ, গণিতকে আমার কাছে পড়ালেখা মনে হয় না! এটাকে আমার কাছে খেলা মনে হয়! যেই খেলায় হারতেও মজা লাগে! কারণ, ওই হারের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে এক নতুন খেলা!!